হবিগঞ্জ, ১ জানুয়ারী : চুনারুঘাট উপজেলার গনেশপুরে অবস্থিত আলহাজ্ব মোজাফফর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃন শফিকুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে ৩০ লক্ষ ১৩ হাজার ১৩ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ হওয়ার পরও এখনও স্বপদে বহাল রয়েছেন। এ নিয়ে ওই এলাকায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিবাকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিবাবকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন স্কুল থেকে। ফলে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কয়েক বছর আগেও যেখানে স্কুলে হাজারের উপর শিক্ষার্থী ছিল এখন তা নেমে ৪শর কোটায় এসেছে। এসএসসির পাশের হার ৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
অভিযোগে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করার পরই বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতা ও পাইকপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ওয়াহেদ আলী সভাপতি হওয়ার পর দুইজন মিলে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসবে মেতে উঠেন। কাউকে না জানিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত কমিটি গঠন, নিয়মবহির্ভুতভাবে স্কুলের টাকা ব্যয় ও ভূয়া বাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর স্কুলের সকল শিক্ষকগণের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন করেন প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম। স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীদেরকেও তিনি বিভিন্নভাবে বঞ্চিত করেন। এ নিয়ে স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীরা
বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। সর্বশেষ গত ১১ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্কুলের বর্তমান ২ শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন দুই শিক্ষার্থী একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলে দেরীতে আসা, নিয়োগ বাণিজ্য, অবৈধভাবে কমিটি গঠন, উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা আদায়, ফর্ম ফিলাপ ও রেজিস্ট্রেশনের সময় অতিরিক্ত টাকা আদায়, শিক্ষক দ্বারা
শিক্ষার্থীদেরকে কু-প্রস্তাব, অবৈধ ইশারা ও ইভটিজিং করা এবং ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে বিয়ে করার অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার সহকারী কমিশনারকে আহবায়ক করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি অফিসারকে সদস্য করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। উক্ত কমিটি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে
ম্যানেজিং কমিটি গঠন, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে খন্ডকালিক শিক্ষক নিয়োগ, স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দেরীতে আসারও সত্যতা প্রমাণিত হয় বলে গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এছাড়াও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি অডিট কমিটি গঠন করা হলে স্কুলের ৬ বছরের হিসাব অডিট করে গত ১০ নভেম্বর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কান্তি ভ’ষণ গুপ্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৩০ লাখ ১৩ হাজার ১৩টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পায়। অডিট রিপোর্ট দেয়ার পর স্কুলের শিক্ষকরা গত ১৭ নভেম্বর স্কুলের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করে প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করার দাবী জানান। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা দুর্নীতিগ্রস্থ প্রধান শিক্ষককে অপসারণ না করে গত ৩০ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক বরাবর দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু এক মাস অতিক্রম করলেও কোন ব্যবস্থা না হওয়ায়
ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
আব্দুর রউফ নামে এক অভিবাবক অভিযোগ করেন, দুর্নীতিগ্রস্থ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ায় তার বিরুদ্ধে সাইবার মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুলের শিক্ষকদেরকে আদর্শ মেনে এবং তাদের উপদেশ নিয়ে বেড়ে উঠে। কিন্তু সেই শিক্ষকই যদি দুর্নীতি পরায়ন হন তাহলে অবিভাবকরা কেন এখানে তাদের বাচ্চা দিবেন। প্রধান শিক্ষকের কারনে স্কুলের শিক্ষার্থী কমছে এবং ফলাফলও খারাপ হচ্ছে।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্কুলের সভাপতি রবিন মিয়ার সাথে যোগাযোগ কা হলে তিনি জানান, আমরা মহাপরিচালক এর আদেশের অপেক্ষা আছি। এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক প্রফেসর এবিএম রেজাউল করীম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ
ব্যাপারে দ্রুত নির্দেশনা প্রেরণ করা হবে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan